মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর- PDF

মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সংগ্রহ করতে এই পোস্ট টি পড়ুন। দুবার খাবার জল চাইলাম, চার পাঁচ বার রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম, কিন্তু কিছুতেই সে আমায় ভালোবাসল না। বরং রীতিমতো উপেক্ষা করল। শুধু আমাকে নয় সকলকে। কাজগুলিকে সে আপনার করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না।মার সঙ্গে মৃদুস্বরে দু একটি দরকারী কথা বলা ছাড়া ছটা থেকে বেলা সাড়ে দশটা অবধি একবার কাশির শব্দ পর্যন্ত করল না। সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতোই স্লানিমার ঐশ্বর্যে মহীয়সী কিন্তু ধরাছোঁয়ার অতীত শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্বিকার।

মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন

এখানে মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো দেওয়া আছে। এই সৃজনশীল গুলো অনুশীলন করার মাধ্যমে বিভিন্ন বোর্ড প্রশ্ন সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারবেন। নিচের দিকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে দেখেনিন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ 

বিয়ের ছয় মাস পর নাজমার স্বামী মারা যায়। সন্তানহীনা নাজমা সংসারে অভাব আছে বলেই মর্যাদাসম্পন্ন নারী হয়েও কবির সাহেবের বাড়িতে কাজ নেয়। কবির সাহেবের মাতৃহারা শিশুসন্তান রনি ও রানাকে নাজমা সন্তানের স্নেহে লালন-পালন করে। উচ্চ শিক্ষিত রনি ও রানা এখন নাজমাকে মায়ের মতো সম্মান করে। কবির সাহেবের সংসারে স্বর্গসুখ এনে দিয়েছে নাজমা।

ক. গৃহকর্মে মমতাদির মাইনে কত টাকা ঠিক হয়েছিল?
খ. “বেশী আস্কারা দিও না। জ্বালিয়ে মারবে”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে নাজমা ‘মমতাদি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কবির সাহেবের পরিবারে স্বর্গসুখ এনে দিতে নাজমার যে ভূমিকা ছিল, তা ‘মমতাদি’ গল্পের সমগ্র মূলভাবকে ধারণ করে – যৌক্তিক মতামত দাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ 

সুবল কয়েক মাস ধরে একটি বাড়িতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। বাড়ির লোকজন কারণে-অকারণে প্রায়ই তাকে বকাবকি করে। বাড়ির কর্তা দু-একবার তার গায়ে হাতও তুলেছে। সুবল মনের দুঃখে গোপনে চোখের জল ফেলে।

ক. মমতাদি বাড়িতে আসার কতদিন পর তার সাথে লেখকের ভাব হলো?
খ. মমতাদি প্রথা ভঙ্গ করে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের সুবলের গৃহকর্মের পরিবেশের সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির প্রাপ্ত পরিবেশের অমিল ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকে ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুরই প্রকাশিত হয়েছে- তোমার মতামতের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ঃ  

রানু এক ধনী পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। বাড়ির লোকজন রানুকে বাইরের একজন লোক হিসেবেই দেখে। একদিন বাড়ি থেকে কিছু টাকা চুরি হয়। কেউ কিছু না বললেও রানু বুঝতে পারে যে কেউ কেউ ওকে সন্দেহ করছে। রানুর সাথে তারা আগের মতো স্বাভাবিক আচরণ করছে না। তাই গৃহকর্ত্রীকে সে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায়। গৃহকর্ত্রী রানুকে ছাড়তে না চাইলেও সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এমনকি গৃহকর্ত্রী তাকে ঈদের বোনাসসহ সেই মাসের বেতন বুঝিয়ে দিতে গেলে রানু তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চলে আসে।

ক. ‘বাছা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘দু ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. গৃহকর্মীর প্রতি আচরণের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের মাঝে অমিল তুলে ধরো।
ঘ. ‘রানু ও মমতাদি দুজনেই আত্মসম্মানবোধে সমুজ্জ্বল’ – উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে মতামত দাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ঃ 

রাসেল ড্রাইভার হিসেবে যেমন দক্ষ তেমনি সৎ। প্রকৌশলী এমারত সাহেব তাকে ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেন। ইফতি, সনাম ও শিলাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসাই তার প্রধান কাজ। ঘরের সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। ইফতিরা ওকে ভাইয়া বলে ডাকে, একসাথে খায়, গল্প করে, বেড়াতে যায়। রাসেলের প্রতি সন্তানদের এই আচরণে এমারত সাহেব ভীষণ খুশি।

ক. মমতাদির বয়স কত ছিল?
খ. মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে রাসেলের মাঝে বিদ্যমান মমতাদির বিশেষ গুণটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের আচরণের ফুটে ওঠা দিকটি সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে কতটুকু প্রভাব ফেলে? যুক্তিসহ বিশে−ষণ করো।

মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

এখানে উপরের দেওয়া সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে। যাদের উত্তর গুলো প্রয়োজন তারা নিচে থেকে সংগ্রহ করে নিন। উত্তর গুলো পাঠ্য বইয়ের আলোকে সংগ্রহ করে দেওয়া আছে।

উত্তর ১ঃ 

ক. গৃহকর্মে মমতাদির মাইনে পনেরো টাকা ঠিক করা হয়েছিল।

খ. স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির চঞ্চলতা বোঝানোর জন্য গৃহকর্ত্রী প্রশ্নোক্ত মন্তব্য করেছেন।

‘মমতাদি’ গল্পে স্কুল-পড়ুয়া ছেলেটি শিশুসুলভ আচরণ করে। সে মমতাদির কাছে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা লাভ করে। মমতাদিও ছেলেটির কাছে বড় বোনের মর্যাদা পায়। ছেলেটিকে কাছে নিয়ে আদর করতে গেলে গৃহকর্ত্রী ছেলেটির শিশুসুলভ চঞ্চলতার কথা মমতাদিকে জানিয়েছেন।

গ. নিয়োগকারীর পরিবারের সদস্যদের আপন করে নেওয়া, মানবিক আচরণপ্রাপ্তি এবং আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হওয়ার দিক থেকে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির সাথে উদ্দীপকের নাজমার সাদৃশ্য আছে।

মমতাদি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘মমতাদি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সংসারের অনটনের কারণে ভদ্র ঘরের নারী হলেও অন্যের বাড়িতে কাজ নিতে বাধ্য হয় সে। তবে তার আত্মমর্যাদাবোধ সবসময়ই ছিল সমুন্নত। নিয়োগকর্ত্রীর পরিবারের সাথে সে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নেয়। তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলেটিকে ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসে। পরিবারটিও মমতাদির সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে।

উদ্দীপকের নাজমা অভাবের সাথে যুদ্ধ করার প্রত্যয়ে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মে আত্মনিয়োগ করে। ওই বাড়ির সন্তানহীনা শিশুদের সে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করে। তারা বড় হয়ে নাজমার সে ভালোবাসার মর্যাদা রাখে। গৃহকর্মীর কাজ করলেও নাজমার আত্মসম্মানবোধ অটুট ছিল। উদ্দীপকের নাজমা চরিত্রের এ দিকগুলো গল্পের মমতাদির সাথে মিলে যায়।

ঘ. উদ্দীপকের কবির সাহেবের পরিবারে স্বর্গসুখ এনে দিতে নাজমা যে মাতৃময়ী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তা ‘মমতাদি’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্কের নানা দিক উঠে এসেছে। এ গল্পে বর্ণিত মমতাদি সংসারে অভাব বিরাজ করায় মানুষের বাড়িতে কাজ নিতে বাধ্য হয় । নিয়োগর্ত্রীর বাড়ির সমস্ত কাজ সে সুচারুরূপে সম্পন্ন করে। বাড়ির সবাইকে ভালোবাসে। নিয়োগকর্ত্রীর পরিবারও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয় এবং তাঁকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে।

উদ্দীপকের নাজমা বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামীকে হারায়। দারিদ্র্যের পীড়নে তাই কবির সাহেবের বাসায় কাজ নেয় সে। গৃহকর্মী হলেও ওই বাড়ির মাতৃহারা শিশুদের প্রতি তার আচরণ ছিল মাতৃসুলভ। পরিবারেরই একজন হয়ে সে বাড়িটিতে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তোলে। ‘মমতাদি’ গল্পে বর্ণিত গৃহকর্মীর আচরণ একই ধরনের হলেও গল্পের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ভিন্ন বিষয়।

‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির প্রতি তার নিয়োগকর্ত্রীর পরিবারের সবাই অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিল। নিয়োগকর্ত্রী মমতাদিকে ভালোবেসে মাইনে বাড়িয়ে ঠিক করল। নিজের ছেলেকে দেখাশোনার দায়িত্ব হাসিমুখে মমতাদির ওপর দিল। মমতাদি তাঁর পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি এমন মানবিক আচরণের দিকটিই ‘মমতাদি’ গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে। আলোচ্য প্রশ্নে যে দিকটির অবতারণা করা হয়েছে তা কেবল উদ্দীপকে বর্ণিত গৃহকর্মী নাজমার কর্মনৈপুণ্য ও ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত, যা ‘মমতাদি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রকাশক। নাজমার প্রতি তার নিয়োগকারী কবির সাহেবের পরিবারের আচরণের বিষয়টি উদ্দীপকে থাকলেও প্রশ্নটি উক্ত বিষয়সংশ্লিষ্ট নয়। তাই কবির সাহেবের পরিবারে স্বর্গসুখ এনে দিতে নাজমার ভূমিকার বিষয়টি মমতাদি গল্পের সমগ্র মূলভাবকে ধারণ করে না।

 উত্তর ২ঃ 

ক. মমতাদি বাড়িতে আসার সপ্তাহখানেক পর তার সাথে লেখকের ভাব হলো।

খ. মমতাদি অভাবের তাড়নায় প্রথা ভঙ্গ করে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছেন।

মমতাদি একজন মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী। তার স্বামী চার মাস যাবৎ বেকার। এ অবস্থায় সংসার চালানোর জন্য মমতাদিকে প্রথাভঙ্গ করতে হয়। সামাজিক প্রথামতো নারীদের অন্তঃপুরে থাকার কথা। কিন্তু অভাব মমতাদির জীবনে এর ব্যত্যয় ঘটায়। তিনি বাধ্য হন বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ খুঁজতে।

গ. উদ্দীপকের সুবলের গৃহকর্মের পরিবেশে অমানবিকতার দিকটি প্রকাশ পেলেও ‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করার দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। ‘মমতাদি’ গল্পে একটি সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ গৃহপরিবেশের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মমতাদি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করলেও তার আত্মমর্যাদা সমুন্নত রয়েছে। তাকে বাড়ির সকলেই আপন করে নিয়েছে।

উদ্দীপকে সুবলের গৃহপরিবেশে ‘মমতাদি’ গল্পের গৃহপরিবেশের বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে। সুবল গৃহকর্মী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেও গৃহকর্তার অমানবিক আচরণ লাভ করে। তাকে নীরবে চোখের জল ফেলতে হয়। মমতাদি কর্মস্থলে যথার্থ মর্যাদা ও সহানুভূতি লাভ করলেও উদ্দীপকের সুবল তার বিপরীত আচরণ প্রত্যক্ষ করে।

ঘ. দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্দীপক এবং ‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মীদের সাথে মানবিক আচরণের দিকটি ফুটে উঠেছে।

‘মমতাদি’ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহকর্মে নিয়োজিতদের প্রতি আচরণের দিকটিকে প্রধান করে তুলেছেন। আমাদের গৃহকর্মে যারা নিয়োজিত রয়েছে তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে স্থাপনের প্রতি লেখক ইঙ্গিত করেছেন। মমতাদির প্রতি তাঁর নিয়োগকারী সুন্দর আচরণ করেছেন। ফলে মমতাদিও নিঃশঙ্কচিত্তে সবাইকে আপন ভাবতে পেরেছেন।

উদ্দীপকে গৃহকর্মীর সাথে আচরণের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিতদেরও যে আত্মমর্যাদা আছে সেই দিকটিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সুবলের চরিত্রের মাঝে। সুবল যেমন গৃহকর্তার কাছে মানবিক আচরণ প্রত্যাশী তেমনি ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদিও মানবিক আচরণ প্রত্যাশী। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করলে গৃহকর্মীরা গৃহের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল এবং আন্তরিক হয়।

যারা গৃহকর্মে কাজ করে তারাও মানুষ। ফলে তারা গৃহকর্তার কাছে নিজের আত্মসম্মান অটুট থাকবে বলে আশা করে। ‘মমতাদি’ গল্প এবং উদ্দীপক উভয়ই গৃহকর্মীর সাথে মানবিক আচরণ করার আবেদনকে মূর্ত করে তুলেছে। গল্পে গৃহকর্মীর সাথে ভালো আচরণের যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে উদ্দীপকে তার প্রয়োজনীয়তাই ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকে ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুরই প্রকাশিত হয়েছে।

উত্তর ৩ঃ 

ক. বাছা শব্দের অর্থ হলো বৎস বা অল্পবয়সী সন্তান।

খ. দু-ফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য বলতে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন গৃহকর্ত্রীর কাছে ভালো ব্যবহার পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় ফেলা মমতাদির চোখের জলকে।

গৃহকর্ত্রী যখন মমতাদিকে খোকাকে আদর করার পূর্ণ অধিকার দিয়ে গেলেন তখন মমতাদির মনে গভীর ভাবাবেগের উদয় হলো। ভালো লাগা, মর্যাদা আর আত্মগৌরবে তার চোখের জল টপটপ করে ঝরে পড়ল। খোকাকে আদর করার কারণে সে অপমানিত হলে হয়তো তার চোখ শুকনোই থাকত। এজন্যই তার চোখের জলকে ‘দু’ফোটা দুর্বোধ্য রহস্য’ বলা হয়েছে।

গ. মমতাদি গল্পের মমতাদি গৃহকর্মে নিয়োজিত থাকাকালীন যথাযোগ্য সম্মান ও সহায়তা পেলেও উদ্দীপকের রানু পায় অবহেলা ও অমর্যাদা।

 ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি গৃহকর্মী হলেও স্কুলপড়ুয়া ছেলে ও তার পরিবার তাঁকে পরিবারের সদস্যের মর্যদা দিয়েছে। মমতাদি তাদের কাছ থেকে পেয়েছে মানবিক আচরণ, ভালোবাসা ও সম্মান। যার ফলে আত্মমর্যাদাবোধ টিকিয়ে রেখে মমতাদি জীবিকা অর্জন করতে সক্ষম হন।

ক্ষ উদ্দীপকের গৃহকর্মী রানু উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পায়নি। টাকা চুরি হওয়ার ঘটনায় গৃহকর্ত্রীসহ সকলেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখেছে। তার সাথে অমানবিক ও অস্বাভাবিক আচরণ করায় সে সীমাহীন অপমানবোধ করেছে। এক্ষেত্রে ‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মীর প্রতি সদ্ব্যবহার পরিলক্ষিত হলেও উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকের রানু ও মমতাদি গল্পের মমতাদি উভয়েই দারিদ্র্যের কাছে মাথানত না করে নিজেদের সততা ও আত্মসম্মানবোধের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে।

 ‘মমতাদি’ গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে গৃহকর্মে নিয়োজিতদের প্রতি মানবিক আচরণের দিকটি। এর পাশাপাশি এখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও কীভাবে মমতাদি ধৈর্যের সাথে নিজের আত্মসম্মানকে টিকিয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর কর্মস্থলের মানুষদের সহানুভূতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 অনুরূপভাবে উদ্দীপকের রানুর চরিত্রটিও আত্মসম্মানবোধে দেদীপ্যমান। উদ্দীপকের রানু দারিদ্র্যজয়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ। চুরির মিথ্যা অপবাদের খোটা তাকে বেদনাহত করেছে। তার আত্মসম্মানের কাছে কোনো কিছুই বড় নয়। তাই সে বেতন বোনাস নিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

উদ্দীপকের রানু এবং মমতাদির চরিত্র বিশ্লেষণ করলে মনে হয় দারিদ্র্য যেন তাদের মহান করে তুলেছে। সমাজের অপরাপর দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য তারা উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে হলেও মমতাদির জীবনে দারিদ্র্য কতটা প্রকট হয়ে উঠেছিল তা তার জীবনময়ের গলির শ্রীহীন ঘরটি দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু মমতাদি কারো করুণা বা দায় বহন না করে নিজেদের মতো করে দারিদ্র্যকে জয় করার চেষ্টা করেছে। উদ্দীপকের রানুও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেয়নি টাকা বা চাকরি রক্ষার লোভে। শত দারিদ্র্যের মাঝে কীভাবে আত্মসম্মানবোধে রাজটীকা পরে থাকা যায় রানু ও মমতাদি আমাদের কাছে সেই দৃশ্যকল্পই তুলে ধরেছে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উত্তর ৪ঃ 

ক. মমতাদির বয়স ছিল ২৩ বছর।

খ. আশাতিরিক্ত মাইনে নির্ধারণ করায় মাইনের কথা জেনে মমতার দুচোখ কৃতজ্ঞতায় সজল হয়ে উঠল।

মমতা অভাবের তাড়নায় পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। তার স্বামীর চার মাস ধরে চাকরি নেই। তাই সে গৃহকর্মীর কাজ নেয়। সে এই কাজ করতে গিয়ে সর্বোচ্চ বারো টাকার মতো বেতন আশা করেছিল। কিন্তু গৃহকর্ত্রী পনেরো টাকা বেতন নির্ধারণ করেন। এ কারণে কৃতজ্ঞাতায় মমতার দুচোখ সজল হয়ে উঠল।

গ. উদ্দীকের রাসেলের মধ্যে বিদ্যমান মমতাদির বিশেষ গুণটি হচ্ছে দক্ষতা ও সততা।

‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি দরিদ্র হলেও সে ছিল অত্যন্ত সৎ। গৃহকর্ত্রীর বাড়িকে নিজের বাড়ি মনে করে সুনিপুণভাবে সব কাজ সম্পন্ন করেছে। কখনও ফাঁকি দেওয়ার কথা ভাবেনি। সে ছিল অত্যন্ত সৎ এবং নিজ কাজে ছিল অত্যন্ত দক্ষ। নিখুঁতভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করত সে।

উদ্দীপকের রাসেল একজন দরিদ্র ড্রাইভার হলেও সে ছিল অত্যন্ত সৎ এবং দক্ষ। সে তার কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা দিয়ে মালিক এমারত সাহেব ও তার পরিবারের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে। এমারত সাহেবের সন্তানেরা তাকে পরিবারের একজন হিসেবে মনে করেছে। ফলে সকলের সাথে তার গড়ে উঠেছে গভীর সম্পর্ক। সুতরাং গল্পের মমতাদি চরিত্রের দক্ষতা এবং সততার গুণটিই উদ্দীপকে রাসেলের মধ্যে বিদ্যমান।

ঘ. রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি চরিত্রটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অসাধারণ সৃষ্টি। মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারীর হয়েও সে অভাবের তাড়নায় অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেয়। তার সততা, চরিত্র মাধুর্য ও কর্মদক্ষতায় সে সহজেই গৃহকর্ত্রীসহ সকলের মন জয় করে নেয়। গৃহকর্ত্রীও ছিলেন অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। মমতাদিকে কখনও গৃহকর্মী ভেবে তুচ্ছ জ্ঞান করেননি। বরং যথাযথ মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করেছেন।

উদ্দীপকের ড্রাইভার রাসেল যেমন সৎ তেমনি দক্ষ। এমরাত সাহেবের সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়াই তার কাজ। সে তার সব কাজ নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে করেছে। শিশুরা তাকে ভাইয়া বলে ডকে। একসাথে খেলে, ঘোরে, গল্প করে। সন্তানদের আচরণে এমারত সাহেবও খুশি। মোটকথা একজন ড্রাইভারের সাথে তার পরিবার অত্যন্ত মানবিক আচরণ করেছে। তার নিজের পরিবারের সদস্যের মতো ব্যবহার করেছে।

‘মমতাদি’ গল্পে স্কুল-পড়–য়া ছেলেটির পরিবার যেমন মমতাদির সাথে মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেছে উদ্দীপকের ড্রাইভার রাসেলের সাথেও এমারত সাহেবের পরিবার ও সন্তানেরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছে। দুটি পরিবারের এই আচরণ সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। উঁচু-নীচু প্রভেদ ভুলে প্রতিটি মানুষের সাথে এমনি করে মানবিক আচরণ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আভিজাত্য ও প্রতিপত্তির মিথ্যা অহংকারেই সমাজে সব অনাচার ও অশান্তি সৃষ্টি হয়। মমতাদি ও ড্রাইভার রাসেলের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তাতে মনুষ্যত্বেরই জয় ঘোষিত হয়েছে। তাই সবাইকে এ ধরনের আচরণেই অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন।

শেষ কথা

আশা করছি এখান থেকে মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত পোস্ট টি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি  এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগেছে। শিক্ষা সংক্রান্ত এই রকম আরও পোস্ট এই ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। নবম-দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের প্রশ্ন উত্তর এই ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

আরও দেখুনঃ

মমতাদি-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা গল্প নবম-দশম শ্রেণি

বাঁধ গল্প – জহির রায়হান। নবম-দশম শ্রেণি বাংলা ১ম পত্র

উদ্যম ও পরিশ্রম সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

উদ্যম ও পরিশ্রম মোহাম্মদ লুৎফর রহমান

আম আঁটির ভেঁপু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ এস এস সি